- January 12, 2025
- By: Samir Shahriar
- BCS_Syllabus
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করার প্রথম ধাপ হলো এর সিলেবাস সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভ করা। বিসিএস পরীক্ষার বিস্তৃত সিলেবাস প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক – এই তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত। এই নিবন্ধে আমরা বিসিএস পরীক্ষার প্রতিটি পর্যায়ের সিলেবাস পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা করব, যা প্রার্থীদের একটি সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করবে।
বিসিএস পরীক্ষা তিনটি প্রধান ধাপে অনুষ্ঠিত হয়:
১. প্রিলিমিনারি পরীক্ষা (Preliminary Test)
২. লিখিত পরীক্ষা (Written Examination)
৩. মৌখিক পরীক্ষা/ভাইভা (Viva Voce)
প্রিলিমিনারি (MCQ) পরীক্ষা
মোট নম্বর: ২০০
সময়: ২ ঘণ্টা
এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই কেবল লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাওয়া যায়।
১. বাংলা ভাষা ও সাহিত্য (৩৫ নম্বর)
- বাংলা ব্যাকরণ: ধ্বনি, শব্দ, পদ, বাক্য, সন্ধি, সমাস, কারক, বিভক্তি, ক্রিয়া, কাল, বাচ্য, প্রত্যয়, উপসর্গ, বিপরীত শব্দ, প্রতিশব্দ, এককথায় প্রকাশ, বাগধারা, প্রবাদ-প্রবচন, শুদ্ধিকরণ।
- বাংলা সাহিত্য: প্রাচীন (চর্যাপদ), মধ্যযুগ (বৈষ্ণব পদাবলি, মঙ্গলকাব্য, অনুবাদ সাহিত্য), আধুনিক যুগ (ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ, উনিশ শতকের সাহিত্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, অন্যান্য কবি ও সাহিত্যিক)। সাহিত্যিকদের জীবনী ও কর্ম।
২. ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য (৩৫ নম্বর)
- ইংরেজি ব্যাকরণ: Parts of Speech, Tense, Voice, Narration, Preposition, Article, Clauses, Phrases, Correction, Transformation of Sentences.
- ইংরেজি সাহিত্য (English Literature): বিভিন্ন যুগের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যিক ও তাদের কর্ম (যেমন: শেক্সপিয়র, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, জন কীট্স, টি.এস. এলিয়ট)।
৩. বাংলাদেশ বিষয়াবলি (৩০ নম্বর)
- বাংলাদেশের ইতিহাস
- প্রাচীন বাংলার ইতিহাস, মধ্যযুগ, ব্রিটিশ শাসন, পাকিস্তান আমল, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান, সরকার ও প্রশাসনিক কাঠামো, অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, সাম্প্রতিক ঘটনাবলি।
- মুক্তিযুদ্ধ
- দেশের বর্তমান পরিস্থিতি
৪. আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি (২০ নম্বর)
- বিশ্ব ইতিহাস
- আন্তর্জাতিক সংস্থা (জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ডব্লিউটিও), আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বৈশ্বিক রাজনীতি, অর্থনীতি, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক ঘটনাবলি।
- গ্লোবাল ইভেন্টস
৫. ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা (১০ নম্বর)
- বাংলাদেশ ও বিশ্বের ভূগোল
- বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি, জলবায়ু, নদ-নদী, জনসংখ্যা,
- পরিবেশ আর দুর্যোগ, পরিবেশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ (বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প), দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা।
৬. সাধারণ বিজ্ঞান (১৫ নম্বর)
- পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান (বেসিক ধারণা), দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান, খাদ্য ও পুষ্টি, রোগব্যাধি, পরিবেশ বিজ্ঞান।
৭. কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি (১৫ নম্বর)
- কম্পিউটারের বেসিক ধারণা, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, অপারেটিং সিস্টেম, ইন্টারনেট, ই-মেইল, ডাটাবেজ, সাইবার নিরাপত্তা।
৮. গাণিতিক যুক্তি (১৫ নম্বর)
- পাটিগণিত, বীজগণিত, জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি, পরিমিতি, সেট, সম্ভাব্যতা।
৯. মানসিক দক্ষতা (১৫ নম্বর)
- যুক্তি, সমস্যা সমাধান, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, বোধগম্যতা, স্থানিক সম্পর্ক।
১০. নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন (১০ নম্বর)
- নৈতিকতা, মূল্যবোধ, সুশাসন, নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য, মানবাধিকার, দুর্নীতি।
লিখিত পরীক্ষা
মোট নম্বর: ৯০০
এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হওয়া যায়।
১. আবশ্যিক বিষয়াবলি:
- বাংলা: ২০০
- ইংরেজি: ২০০
- বাংলাদেশ বিষয়াবলি: ২০০
- আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি: ১০০
- গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা: ১০০
- সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: ১০০
২. ঐচ্ছিক বিষয় (Cadre অনুযায়ী):
ঐচ্ছিক বিষয় (২০০ নম্বর): ক্যাডার অনুযায়ী একটি বিষয় নির্বাচন করতে হয়। কিছু ঐচ্ছিক বিষয় হলো:
- পদার্থবিজ্ঞান
- রসায়ন
- গণিত
- উদ্ভিদবিজ্ঞান
- প্রাণীবিজ্ঞান
- ভূগোল
- অর্থনীতি
- রাষ্ট্রবিজ্ঞান
- সমাজবিজ্ঞান
- ইতিহাস
- দর্শন
- প্রশাসন
- আইন
- ব্যবস্থাপনা
- হিসাববিজ্ঞান
- পরিসংখ্যান
- কৃষি
- ইত্যাদি।
ভাইভা (ইন্টারভিউ)
মোট নম্বর: ১০০
এই পর্বে প্রার্থীর ব্যক্তিত্ব, যোগাযোগ দক্ষতা, সাধারণ জ্ঞান, বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান, এবং মানসিক প্রস্তুতি যাচাই করা হয়।
বিসিএস প্রস্তুতির জন্য কিছু অতিরিক্ত টিপস:
- সিলেবাস ভালোভাবে বুঝুন।
- নিয়মিত পড়াশোনা করুন এবং রুটিন মেনে চলুন।
- বেসিক বইয়ের পাশাপাশি রেফারেন্স বই পড়ুন।
- নিয়মিত পত্রিকা পড়ুন এবং সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে অবগত থাকুন।
- পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নপত্র সমাধান করুন।
- মডেল টেস্ট দিন এবং নিজের দুর্বলতা চিহ্নিত করুন।
- সময় ব্যবস্থাপনা করুন।
- আত্মবিশ্বাসী থাকুন।
বিসিএস পরীক্ষার সাফল্যের জন্য সিলেবাসের পুঙ্খানুপুঙ্খ জ্ঞান অপরিহার্য। এই নিবন্ধে আমরা প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার প্রতিটি অংশের বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এখন আপনার দায়িত্ব হলো এই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে একটি সুপরিকল্পিত প্রস্তুতি শুরু করা। সঠিক পথে পরিশ্রম করলে সাফল্য অবশ্যম্ভাবী।